গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় যেন দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।ডিগ্রি এ মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে নিয়োগ জাল সনদ সহ কাম্য ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা না থাকা সত্তেও বিধি বর্হিভূতভাবে বেতন উত্তলনের অভিযোগ দায়ের করেছেন মোঃ আব্দুর রহিম, আশিকুর রহমান, আতিকুর রহমান, রাজা মিয়া, মাহালম, ও মেহেদী হাসান নামের কয়েকজন অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
অভিযোগের সুত্র ও অভিযোগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ে দীর্ঘদিনধরে অনিয়ম ও দূর্নীতির স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হয়েছে।চলতি বছরের ৩০ ও ১৮ জুলাই ২০২৪ ইং তারিখ গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক বরাবর এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন অভিযোগকারীরা।
অভিযোগে বলা হয়,অত্র কলেজের আইসিটি বিভাগের প্রভাষক জনাব তৌহিদা বেগম গত ২০০২ সালে আইসিটি সার্টিফিকেট জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন এবং২২ বছর ধরে সোনালী ব্যাংক ফুলছড়ি শাখার হিসাব নং ৩৪০৫২০৯২ থেকে অবৈধভাবে বেতন উত্তলন করে আসছেন যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এমপিও নিতীমালা ১৮.১.ঙ বিধি বহির্ভূত।আইসিটি বিভাগের প্রভাষক তৌহিদা বেগমের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ছয় মাসের নট্রামস এর আইসিটি সার্টিফিকেট রয়েছে উল্লেখ থাকলেও তিনি একটি জাল সার্টিফিকেট প্রদান করে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। এ দিকে তার স্বামী মোঃ মাহবুব হোসেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হওয়ায় শিক্ষা অফিস রংপুর অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ করে তার সহকারী অধ্যাপকের ফাইলটি পাস করে নেন যা বিধি বহির্ভূত।
আরো জানা যায়,অত্র কলেজের যুক্তিবিদ্যা বিভগের প্রভাষক কামরুল লাইলা ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১২ ইং তারিখে NTRC এর জাল সনদ দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত হন।তার NTRC এর জাল সনদ এর সিরিয়াল নং ৯২৫৪৯৯, রেজি নংঃ ৩৪৬২৫৮/ ২০০৯ ও রোল নং ৪০৭১০২০৫ এই সনদটির মাধ্যমে গত ২০১৮ সালের জুন মাস থেকে ইনডেক্স নং(৩০৯৭৫৩৯) এ অবৈধ ভাবে বেতন উত্তোলন করে আসছেন যা জালিয়াতির শামিল এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮.১.ঙ বিধিবহির্ভূত।
অত্র কলেজের সাচিবিক বিদ্যা বিভাগের প্রভাষক সাহানাজ বেগম শম্পা গত ১০ নভেম্বর ইং ২০০৩ তারিখে গভর্নিং বডির ৪৭ তম সভায় অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হোন। উক্ত নিয়োগ রেজুলেশনে তৎকালীন সভাপতি জনাবা বেগম রওশন এরশাদ ( সাবেক এমপি) এর সাক্ষর নাই। গভর্নিং বডির ৪৬ তম সভায় তৎকালীন নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামীম মাহবুব ২৮ শে সেপ্টেম্বর ২০০৩ থেকে ১৭ই নভেম্বর ২০০৩ পর্যন্ত নায়েম এ ট্রেনিং এ থাকার আগে ২৬ অক্টোবর ২০০৩ তারিখে গভর্নিং বডির রেজুলেশনে তৎকালীন শিক্ষক প্রতিনিধি ও ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক শাহিনূর আলমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন। রেজুলেশনে উল্লেখ করেন অধ্যক্ষ ট্রেনিং শেষে এসে দায়িত্ব গ্রহন করলে তার এক দিন পর নিয়োগ কার্য সম্পাদন করবেন। কিন্তু গোপনে তরিঘরি করে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ সম্পাদন করেন। নিয়োগ পরিক্ষার নিয়ম অনুযায়ী তিন জন পরিক্ষার্থীর অংশ গ্রহন করার কথা থাকলেও উপস্থিত ছিলেন দুই জন। রেজুলেশন ও সিএস কপির ফলাফল শীটে দুই জনার উপস্থিতি রয়েছে। তার নিয়োগ পরিক্ষায় কোন এক্সপার্ট ছিলোনা, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজেই এই পরিক্ষা নেন যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮. ১ বিধি বহির্ভূত। শাহানাজ বেগম শম্পা সাচিবিক বিদ্যা বিভাগে অবৈধ ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েও এখন উৎপাদন ও বিপনন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে বেতন উত্তলন করেন। অথচ এ বিষয়ে কলেজে সমন্বয়ের কোন রেজুলেশন নাই।
অত্র কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক ইসরাত জাহান চৌধুরী ১৫ জুন ২০০৪ ইং তারিখে প্রভাষক পদে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। তাহার ইন্ডেস্ক নং এন ৩১০০৫৮৫, সোনালী ব্যাংক ফুলছড়ি শাখার একাউন্ট নং ৩৪৩০২৪৭১ থেকে ৫ বছর ধের বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। নিয়োগ বিধিমালা মোতাবেক চাকরির নিয়োগ পরিক্ষায় অংশগ্রহণকারী থাকতে হবে নূন্যতম ৩ জন, কিন্তু ১৫ জুন ২০২৪ তারিখে নিয়োগ পরিক্ষায় অংশগ্রহণকারী হিসেবে ইসরাত জাহান চৌধুরী শুধু একাই উপস্থিত ছিলেন। তার নিয়োগের সুপারিশ রেজুলেশন ডিজির নিকট গ্রহনযোগ্য না হওয়ায় পরবর্তীতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেজুলেশনের দ্বীতিয় পাতা ও বইয়ের এগারো নং পাতা পরিবর্তন করে এক জনার স্থলে ভূয়া ৩ জন প্রার্থী দেখিয়ে সভাপতির সাক্ষর জাল করে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক জহুরুল ইসলাম ও বর্তমান অধ্যক্ষ এটিএম রাশেদুজ্জামান যোগসাজশে ডিজিতে প্রেরণ করে এমপিওভূক্ত হন যা বিধি বহির্ভূত ও সম্পুর্ন জালিয়াতি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮.৪ বিধি মোতাবেক কলেজে কোন বিজ্ঞান শাখা খোলা ও চলমান থাকার জন্য যে কোন ভিভাগে নূন্যতম ছাত্র ছাত্রী থাকা প্রয়েজন ২৫ জন, অথচ অত্র কলেজে ২০২১-২২ ও ২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ ছাড়া প্রতিবছর ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা যথাক্রমে ৮,৯,৪,১২ ও ১৬ জন করে ছিলো। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা প্রথম বর্ষে ৭ জন দ্বিতীয় বর্ষে মাত্র ১৬ জন। যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ১৬.৩ বিধি বহির্ভূত ভাবে বিভাগটি চালু রাখা হয়েছে। কোন বিভাগ টিকে থাকার জন্য নুন্যতম পাশের হার থাকতে হবে উল্লেখ্য যে অত্র কলেজের ২০২৩ সালের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করেছে মাত্র তিন (০৩)জন। প্রতিমাসে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা বেতন উত্তোলন করে থাকে।
বর্তমান অধ্যক্ষ সব কিছু জেনেও বিধি বহির্ভূত ভাবে এই বেতনে সাক্ষর করে আসছেন। যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ১৮.১.চ বিধি লংঘনের সামিল। বর্তমান অধ্যক্ষ এটি এম রাশেদুজ্জামান উল্লেখিত সব কিছু অবগত হওয়া সত্তেও কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করেন নি। বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তদন্তপুর্বক বিভাগীয় ও ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণে মর্জি কামনা করে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগকারীরা অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ কারিরা বলেন,অভিযুক্তরা প্রভাবশালী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে এতদিন ধরে অনিয়ম করে আসছেন এবং আমাদের বিভিন্নভাবে অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য হুমকি ধামকি দিচ্ছেন।এ বিষয়ে অভিযুক্ত দের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে মোবাইল ফোনে ও অত্র কলেজে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি।
এ দিকে কলেজের এসব সীমাহীন দুর্নীতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় এলাকাবাসীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, কলেজে দীর্ঘ দিন ধরে অনিয়ম দূর্নীতি হয়ে আসছে কিন্তু অভিযুক্তরা প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকার কারণে বিচার পাননি। এলাকাবাসী এর আগে অনেকবার আন্দোলন সংগ্রাম করেও অধ্যক্ষসহ অভিযুক্তদের কিছুই করতে পারেননি। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে তাদের আকুল আবেদন ও দাবী অতি দ্রূত সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে শাস্তি মুলক ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিশেষ প্রতিনিধিঃ 











