সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গরু-খাসির মাংস ছুঁলেই হতে পারে অ্যানথ্রাক্স! ঝুঁকি শুধু গ্রামেই নয়, শহরেও! করণীয় কি?

  • নিউজ ডেক্স:
  • Update Time : ১১:২৪:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
  • ৬৮ Time View

গরু কিংবা খাসির মাংস ভোজনরসিক বাঙালির খাবার তালিকায় অন্যতম প্রিয়। রেজালা, কালাভুনা, ঝাল মেজবান বা লেগ রোস্ট—সব খাবারেই গরু ও খাসির মাংসের উপস্থিতি অনিবার্য। তবে সম্প্রতি নতুন এক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে — মাংসের সংস্পর্শে ছড়াচ্ছে অ্যানথ্রাক্স (Anthrax), যা প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ।

রংপুর, গাইবান্ধাসহ দেশের কয়েকটি জেলায় ইতোমধ্যে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। এই রোগের জীবাণু মূলত গবাদিপশু, যেমন—গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির দেহে থাকে, এবং সেখান থেকেই মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন—

“অ্যানথ্রাক্স একটি প্রাণিবাহিত রোগ। এটি মূলত গবাদি পশু যেমন ভেড়া, ছাগল, গরুর মাধ্যমে ছড়ায়। ছড়ানোর পথও একাধিক—স্পর্শের মাধ্যমে, খাবারের মাধ্যমে বা শ্বাসের মাধ্যমে।”

তিনি আরও বলেন,

“অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়া এক ধরনের ‘স্পোর’ বা গুটিকা তৈরি করে, যা দীর্ঘ সময় পরিবেশে টিকে থাকে। এটি যদি আমাদের ত্বকের সংস্পর্শে আসে, খাবারের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে বা শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে যায়, তবে সংক্রমণ ঘটতে পারে।”

ঝুঁকি শুধু গ্রামেই নয়, শহরেও

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া না হলে রাজধানী ঢাকাতেও অ্যানথ্রাক্সের প্রভাব দেখা দিতে পারে।
ডা. লেলিন বলেন—

“গাইবান্ধায় অ্যানথ্রাক্স দেখা দিলেও, সেখান থেকে পশু ঢাকায় এলে এবং সেই পশু জবাই করা হলে বা মাংস পরিবহনের সময় সংক্রমণ ঘটলে, ঢাকাও ঝুঁকির বাইরে থাকবে না।”

তবে রাজধানীর মাংস বিক্রেতারা জানিয়েছেন, তারা সুস্থ ও যাচাইকৃত পশুর মাংসই বিক্রি করেন।
এক বিক্রেতা বলেন—

“আমাদের ঢাকা সিটিতে অ্যানথ্রাক্স নেই। কারণ আমরা হাট থেকে সুস্থ গরু কিনি, যাচাই-বাছাই করা হয়, তারপর কাটা হয়।”

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নজরদারির দাবি

ক্রেতারা বলছেন, এককভাবে প্রতিরোধ সম্ভব নয়; এ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ, খামার পর্যায়ে নজরদারি এবং পশু চিকিৎসা ব্যবস্থার শক্তিশালী তদারকি দরকার।
এক ক্রেতা জানান—

“এটা শুধু দোকানদার বা ব্যক্তির পক্ষে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সরকারকে খামার পর্যায়ে কঠোর তদারকি চালাতে হবে। প্রয়োজনে লোকবল ও সরঞ্জাম বাড়াতে হবে।”

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

গবাদিপশু অসুস্থ হলে জবাই করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

মাংস বা পশুর রক্তের সংস্পর্শে আসলে ভালোভাবে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।

অপর্যাপ্তভাবে সিদ্ধ মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

খামার ও পশুবাজারে টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

কোনো পশু হঠাৎ মারা গেলে চামড়া বা মাংসে হাত না দিয়ে স্থানীয় পশু চিকিৎসককে জানান।

শেষ কথা

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে সচেতনতা, সঠিক তথ্য ও সময়মতো ব্যবস্থা গ্রহণই একমাত্র পথ। খামারি, পশু চিকিৎসক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ—সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুরুতেই যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাহলে অ্যানথ্রাক্স আর আতঙ্ক নয়—বরং প্রতিরোধযোগ্য এক রোগ হিসেবেই থাকবে।

(সুত্র:দৈনিক জনকণ্ঠ)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সাংবাদিকদের বিশেষ ছাড়ে ইলেকট্রিক-বাইক দিচ্ছে ন্যামস মোটরস

গরু-খাসির মাংস ছুঁলেই হতে পারে অ্যানথ্রাক্স! ঝুঁকি শুধু গ্রামেই নয়, শহরেও! করণীয় কি?

Update Time : ১১:২৪:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

গরু কিংবা খাসির মাংস ভোজনরসিক বাঙালির খাবার তালিকায় অন্যতম প্রিয়। রেজালা, কালাভুনা, ঝাল মেজবান বা লেগ রোস্ট—সব খাবারেই গরু ও খাসির মাংসের উপস্থিতি অনিবার্য। তবে সম্প্রতি নতুন এক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে — মাংসের সংস্পর্শে ছড়াচ্ছে অ্যানথ্রাক্স (Anthrax), যা প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ।

রংপুর, গাইবান্ধাসহ দেশের কয়েকটি জেলায় ইতোমধ্যে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। এই রোগের জীবাণু মূলত গবাদিপশু, যেমন—গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির দেহে থাকে, এবং সেখান থেকেই মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন—

“অ্যানথ্রাক্স একটি প্রাণিবাহিত রোগ। এটি মূলত গবাদি পশু যেমন ভেড়া, ছাগল, গরুর মাধ্যমে ছড়ায়। ছড়ানোর পথও একাধিক—স্পর্শের মাধ্যমে, খাবারের মাধ্যমে বা শ্বাসের মাধ্যমে।”

তিনি আরও বলেন,

“অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়া এক ধরনের ‘স্পোর’ বা গুটিকা তৈরি করে, যা দীর্ঘ সময় পরিবেশে টিকে থাকে। এটি যদি আমাদের ত্বকের সংস্পর্শে আসে, খাবারের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে বা শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে যায়, তবে সংক্রমণ ঘটতে পারে।”

ঝুঁকি শুধু গ্রামেই নয়, শহরেও

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া না হলে রাজধানী ঢাকাতেও অ্যানথ্রাক্সের প্রভাব দেখা দিতে পারে।
ডা. লেলিন বলেন—

“গাইবান্ধায় অ্যানথ্রাক্স দেখা দিলেও, সেখান থেকে পশু ঢাকায় এলে এবং সেই পশু জবাই করা হলে বা মাংস পরিবহনের সময় সংক্রমণ ঘটলে, ঢাকাও ঝুঁকির বাইরে থাকবে না।”

তবে রাজধানীর মাংস বিক্রেতারা জানিয়েছেন, তারা সুস্থ ও যাচাইকৃত পশুর মাংসই বিক্রি করেন।
এক বিক্রেতা বলেন—

“আমাদের ঢাকা সিটিতে অ্যানথ্রাক্স নেই। কারণ আমরা হাট থেকে সুস্থ গরু কিনি, যাচাই-বাছাই করা হয়, তারপর কাটা হয়।”

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নজরদারির দাবি

ক্রেতারা বলছেন, এককভাবে প্রতিরোধ সম্ভব নয়; এ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ, খামার পর্যায়ে নজরদারি এবং পশু চিকিৎসা ব্যবস্থার শক্তিশালী তদারকি দরকার।
এক ক্রেতা জানান—

“এটা শুধু দোকানদার বা ব্যক্তির পক্ষে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সরকারকে খামার পর্যায়ে কঠোর তদারকি চালাতে হবে। প্রয়োজনে লোকবল ও সরঞ্জাম বাড়াতে হবে।”

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

গবাদিপশু অসুস্থ হলে জবাই করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

মাংস বা পশুর রক্তের সংস্পর্শে আসলে ভালোভাবে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।

অপর্যাপ্তভাবে সিদ্ধ মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

খামার ও পশুবাজারে টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

কোনো পশু হঠাৎ মারা গেলে চামড়া বা মাংসে হাত না দিয়ে স্থানীয় পশু চিকিৎসককে জানান।

শেষ কথা

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে সচেতনতা, সঠিক তথ্য ও সময়মতো ব্যবস্থা গ্রহণই একমাত্র পথ। খামারি, পশু চিকিৎসক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ—সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুরুতেই যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাহলে অ্যানথ্রাক্স আর আতঙ্ক নয়—বরং প্রতিরোধযোগ্য এক রোগ হিসেবেই থাকবে।

(সুত্র:দৈনিক জনকণ্ঠ)