সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দারা।
এলজিইডি’র “বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের জেলা সমূহের পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন (GRRIP)” প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন সড়কগুলোর শুরু থেকেই অভিযোগ উঠছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির।
অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন উপজেলা এলজিইডি’র উপসহকারী প্রকৌশলী হেলালুর রহমান হেলাল এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সোমবার (২৭ জুলাই) হোসেনপুর ইউপির শিশুদহ-কদমতলী সড়কে নিম্নমানের ইটের খোয়া দিয়ে সলিং কাজ চলাকালে আকবর নগর–শ্রীখন্ডী রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে GRRIP প্রকল্পে হোসেনপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ২২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। উন্নয়নাধীন সড়কগুলোর মধ্যে রয়েছে:
শিশুদহ থেকে কদমতলী বাজার সড়ক,কদমতলী বাজার থেকে শালমারা সড়ক,শিশুদহ থেকে কোদালকাটি ভায়া আকবর নগর সড়ক,শাইনদহ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে নুরুল ফকিরের বাড়ি,কদমতলী বাজার থেকে হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়ক।
প্রকল্প বাস্তবায়নের শর্ত অনুযায়ী উন্নতমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, সাইটে অনুমোদিত ডিজাইন ও ড্রইং সংরক্ষণ, সাইট অর্ডার বুক রাখা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত তদারকি থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে এর কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র ও এলাকাবাসী জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আশপাশের ইটভাটা থেকে নিম্নমানের ইটের আদলা ও খোয়া এনে রাস্তার সলিংয়ের কাজে ব্যবহার করছে। এতে সড়কগুলোর টেকসইতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
শ্রীখণ্ডী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আঃ মান্নান বলেন, “এত নিম্নমানের খোয়া দিয়ে রাস্তা বানালে এক বছর তো দূরের কথা, বর্ষাতেই ভেঙে পড়বে।”
একই গ্রামের গোলাম মওলা বলেন, “জনগণের করের টাকায় এভাবে কাজ হলে সেটা যেমন রাষ্ট্রের ক্ষতি, তেমনি এলাকাবাসীর স্বপ্নও ভেঙে যাবে।
সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের তথ্য নিতে উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে গেলে, উপসহকারী প্রকৌশলী হেলালুর রহমান হেলাল ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “আমার অফিসে সাংবাদিকের ঢোকা নিষেধ। কিছু লেখলে লেখেন—আমার কিছুই হবে না।”
উপজেলা প্রকৌশলী তৌহিদুল করিম সরকার বলেন, “নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে খোয়া অপসারণের নির্দেশ দিয়েছি।”
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, “সরকারি অর্থের অপচয় এবং জনগণের আস্থার বিনাশ ঠেকাতে হলে এই ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে দোষীদের। এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা রোধে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা এখন সময়ের দাবি।”
মোঃফেরদাউছ মিয়া,সংবাদদাতা,পলাশবাড়ী, গাইবান্ধাঃ 











