সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্ত্রীর সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে ২৭ বছর পর তালাক!

প্রায় ২৭ বছর আগে আনসার বাহিনীতে চাকুরীর সুবাদে ফিরোজ আহমেদ ও মাহাফুজা আক্তারের পরিচয় হয়। এরপর পারিবারিকভাবে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরে তাদের সংসারে আলো হয়ে আসে এক ছেলে ও এক মেয়ে। তবে শুরু থেকেই সন্তানদের বেড়ে ওঠা ও খোঁজ খবর নেওয়ার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ ছিল না ফিরোজ আহমেদের।

সংসারেও মন ছিলনা তার। নেশা ছিল শুধুই টাকার। বিয়ের পর থেকে স্ত্রীর বেতনও নিয়েছিলেন নিজের কবজায়। কৌশলে ব্যাংক থেকে স্ত্রীর নামে নেন মোটা অঙ্কের ঋণ। ফাঁকা চেকে স্বাক্ষর নিয়ে রেখে দেন নিজের কাছে। তবে তখনো স্বামীর মুল অভিসন্ধি বুঝতে পারেননি মাহাফুজা আক্তার। এরপর বাড়িসহ সমস্থ সম্পতি নিজের করে নিয়ে স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকার চেক ডিজওর্নার মামলা দেন ফিরোজ আহমেদ। সর্বশেষ ২৭ বছরের ছলচাতুরীর সংসার শেষে চলতি মাসের ১১ ফেব্রুয়ারী পাঠিয়ে দেন তালাকনামা। এমননি একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে গাইবান্ধা সদর উপজেলার নায়ারনপুরের সুখনগর এলাকায়।

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে প্রেসক্লাব গাইবান্ধা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ভুক্তভোগী মাহাফুজা আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে স্বামীর প্রতারণার ফিরিস্তি তুলে ধরেন সাংবাদিকের কাছে। তিনি বলেন, আমার স্বামী এতবড় প্রতারণা করবে আমি কখনো কল্পনাও করতে পারি নাই। ২৭ বছরের সংসারে সমস্থ গ্লানি মুখ বুজে সহ্য করেছিলাম। কিন্তু আমার শেষ রক্ষা হলো না। অবশেষে তালাক জুটলো আমার কপালে!

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, প্রায় দুই বছর আগে আমার স্বামী সন্তানের চিকিৎসা ও ঋণ পরিশোধের কথা বলে আমার কাছে দুটি ফাঁকা চেকে স্বাক্ষর নেয়। পরে আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করে গত বছর জানুয়ারীতে তার ছোট ভাই রাশেদুল ইসলামকে দিয়ে প্রথমে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং রাজ্জাক মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে ওই বছরের ফেব্রুয়ারীতে ৪ লাখ ৮০ হাজার চেক ডিজঅর্নার মামলা দেয়।
এখানেই শেষ নয়, আমার নামে আনসার ভিডিপি ব্যাংক হতে ৬ লাখ টাকা ঋণ তুলে নেয়। যা এখন আমি নিজেই পরিশোধ করে আসছি। আমার চাকুরী জীবনের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে তৈরিকৃত বাড়ীও সমস্থ সম্পতি লিখে নিয়ে বাড়ি উচ্ছেদ মামলা দায়ের করে। বাড়ির বিদ্যূত সংযোগ সহ বিছিন্নসহ সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারী আমাকে তালাক দিয়ে দেয়।

বর্তমানে আমার স্বামী বান্দরবান জেলায় আনসার ব্যাটালিয়ানে কর্মরত। তিনি আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করে আমাকে ও আমার সন্তানদের পথে বসিয়েছেন। সারা জীবনের অর্জিত সম্পদ হারিয়ে আমি এখন নি:স্ব।

তিনি বলেন, এমন প্রতারনার বিষয়ে আমি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছি। কিন্তু সেই মামলার তেমন অগ্রগতি নেই। আমি আপনাদের মাধ্যমে এই ঘটনার সঠিক বিচার দাবি করছি। মানুষরুপি প্রতারক ফিরোজ আহমেদ আঙ্গুরের বিরুদ্ধে আইন ব্যবস্থা গ্রহন করে আমার ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

অভিযোগের বিষয়ে আনসার সদস্য ফিরোজ আহমেদ আঙ্গুর মুঠোফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ ভুয়া এবং ভিত্তিহীন। এসব অভিযোগের কোন সত্যতা নেই।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সাংবাদিকদের বিশেষ ছাড়ে ইলেকট্রিক-বাইক দিচ্ছে ন্যামস মোটরস

স্ত্রীর সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে ২৭ বছর পর তালাক!

Update Time : ১১:১৪:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

প্রায় ২৭ বছর আগে আনসার বাহিনীতে চাকুরীর সুবাদে ফিরোজ আহমেদ ও মাহাফুজা আক্তারের পরিচয় হয়। এরপর পারিবারিকভাবে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরে তাদের সংসারে আলো হয়ে আসে এক ছেলে ও এক মেয়ে। তবে শুরু থেকেই সন্তানদের বেড়ে ওঠা ও খোঁজ খবর নেওয়ার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ ছিল না ফিরোজ আহমেদের।

সংসারেও মন ছিলনা তার। নেশা ছিল শুধুই টাকার। বিয়ের পর থেকে স্ত্রীর বেতনও নিয়েছিলেন নিজের কবজায়। কৌশলে ব্যাংক থেকে স্ত্রীর নামে নেন মোটা অঙ্কের ঋণ। ফাঁকা চেকে স্বাক্ষর নিয়ে রেখে দেন নিজের কাছে। তবে তখনো স্বামীর মুল অভিসন্ধি বুঝতে পারেননি মাহাফুজা আক্তার। এরপর বাড়িসহ সমস্থ সম্পতি নিজের করে নিয়ে স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকার চেক ডিজওর্নার মামলা দেন ফিরোজ আহমেদ। সর্বশেষ ২৭ বছরের ছলচাতুরীর সংসার শেষে চলতি মাসের ১১ ফেব্রুয়ারী পাঠিয়ে দেন তালাকনামা। এমননি একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে গাইবান্ধা সদর উপজেলার নায়ারনপুরের সুখনগর এলাকায়।

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে প্রেসক্লাব গাইবান্ধা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ভুক্তভোগী মাহাফুজা আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে স্বামীর প্রতারণার ফিরিস্তি তুলে ধরেন সাংবাদিকের কাছে। তিনি বলেন, আমার স্বামী এতবড় প্রতারণা করবে আমি কখনো কল্পনাও করতে পারি নাই। ২৭ বছরের সংসারে সমস্থ গ্লানি মুখ বুজে সহ্য করেছিলাম। কিন্তু আমার শেষ রক্ষা হলো না। অবশেষে তালাক জুটলো আমার কপালে!

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, প্রায় দুই বছর আগে আমার স্বামী সন্তানের চিকিৎসা ও ঋণ পরিশোধের কথা বলে আমার কাছে দুটি ফাঁকা চেকে স্বাক্ষর নেয়। পরে আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করে গত বছর জানুয়ারীতে তার ছোট ভাই রাশেদুল ইসলামকে দিয়ে প্রথমে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং রাজ্জাক মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে ওই বছরের ফেব্রুয়ারীতে ৪ লাখ ৮০ হাজার চেক ডিজঅর্নার মামলা দেয়।
এখানেই শেষ নয়, আমার নামে আনসার ভিডিপি ব্যাংক হতে ৬ লাখ টাকা ঋণ তুলে নেয়। যা এখন আমি নিজেই পরিশোধ করে আসছি। আমার চাকুরী জীবনের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে তৈরিকৃত বাড়ীও সমস্থ সম্পতি লিখে নিয়ে বাড়ি উচ্ছেদ মামলা দায়ের করে। বাড়ির বিদ্যূত সংযোগ সহ বিছিন্নসহ সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারী আমাকে তালাক দিয়ে দেয়।

বর্তমানে আমার স্বামী বান্দরবান জেলায় আনসার ব্যাটালিয়ানে কর্মরত। তিনি আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করে আমাকে ও আমার সন্তানদের পথে বসিয়েছেন। সারা জীবনের অর্জিত সম্পদ হারিয়ে আমি এখন নি:স্ব।

তিনি বলেন, এমন প্রতারনার বিষয়ে আমি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছি। কিন্তু সেই মামলার তেমন অগ্রগতি নেই। আমি আপনাদের মাধ্যমে এই ঘটনার সঠিক বিচার দাবি করছি। মানুষরুপি প্রতারক ফিরোজ আহমেদ আঙ্গুরের বিরুদ্ধে আইন ব্যবস্থা গ্রহন করে আমার ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

অভিযোগের বিষয়ে আনসার সদস্য ফিরোজ আহমেদ আঙ্গুর মুঠোফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ ভুয়া এবং ভিত্তিহীন। এসব অভিযোগের কোন সত্যতা নেই।