কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ীতে তৈরি প্রথম মিনি তাঁত কারখানায় তৈরি হচ্ছে গামছা।মিনি এই তাঁত কারখানা গড়ে তুলেছেন শহিদুল্ল্যাহ নামের এক উদ্যোক্তা।

দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই তার মিনি তাঁত কারখানার খট খট শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা।সেখানে তৈরি হচ্ছে গামছা। নজর কাড়ছে এলাকাবাসীর। উৎপাদন বাড়াতে এবং এই মিনি কারখানাটিকে বড় পরিসরে করতে সহযোগিতা কামনা করছেন তিনি।

উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্তঘেষা গজেরকুটি এলাকার মিনি তাঁত কারখানায় গিয়ে দেখা যায়,ওই এলাকার আমির হোসেনের ছেলে শহিদুল্ল্যাহ তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে তার বাড়ির উঠানে ছোট একটি টিনসেটের ঘরে মিনি তাঁত শিল্প গড়ে তুলেছেন। মাত্র এক মাসের মধ্যেই ওই তাঁত কারখানার মাধ্যমে গামছা তৈরি করায় এলাকায় ব্যাপক সারা ফেলেছেন। তার গড়া তাঁত কারখানা দেখার জন্য দূর-দূরান্তের মানুষদেরও নজর কাড়ছে। কারখানায় গামছা তৈরির সময় এক নজর দেখার জন্য এলাকাবাসীসহ আশপাশের বিভিন্ন বয়সী মানুষের ঢল নামে।

তাঁত সমৃদ্ধ উপজেলা হিসেবে তাঁত পল্লী গড়ে তোলার লক্ষ্যে শুধুমাত্র প্রথম পর্যায়ে গামছা তৈরি করছেন উদ্যোক্তা শহিদুল্ল্যাহ। সেই সঙ্গে কারখানার উৎপাদিত গামছার কদর ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলাজুড়ে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সুমন চন্দ্র রায় ও বুলবুল ইসলাম জানান,ওই তাঁত কারখানার মালিক শহিদুল্ল্যাহ টানা ১০ থেকে ১৫ বছর তাঁত শিল্পের কর্মচারী হিসাবে কাজ করেছেন। ছোট কারখানা হলেও তিনি এখন নিজেই মালিক। প্রতিদিন তার কারখানায় গামছা তৈরি হচ্ছে। এই কারখানার খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন তার কারখানায় গামছা তৈরির দৃশ্য স্ব-চোখে দেখেন ও মোবাইলে ছবিসহ ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে মনের ক্ষুধা মিটান অনেকে।সবচেয়ে বড় কথা হলো বাড়ির পাশে তাঁত শিল্প গড়ে উঠাটা গর্ভের বিষয়। আমরা তার সাফল্য কামনা করি।

নাওডাঙ্গা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার জানান,ভাবতে পারিনি আমার এলাকায় তাঁত শিল্প গড়ে উঠবে। তাঁত মালিক শহিদুল্ল্যাহ খুবই পরিশ্রমী একজন মানুষ। সে দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জীবন-জীবিকার তাগিদে তাঁত শিল্পে কাজ করেছেন। তবে তার স্বপ্ন ছিল সে নিজ বাড়িতে একটি তাঁত শিল্প গড়ে তুলবেন। সে তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে গত এক মাসে কারখানায় গামছা তৈরি করে এলাকার মানুষ কে তাগ লাগিয়ে ফেলেছেন। প্রতিদিনেই তার কারখানায় গামছা তৈরি করা দেখতে এখনো মানুষের ঢল নামে। অনেকেই সরাসরি তার কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে গামছাও ক্রয় করেন।

তাঁত কারখানার মালিক শহিদুল্ল্যাহ জানান,অনেক স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেছি। সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

কারখানাটি শুরু করতে দুইটি পাওয়ার লুম (মেশিন) সিরাজগঞ্জ থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ক্রয় করা হয়েছে। নিয়ে আসা খরচ ১৫ হাজার টাকা। সেই সাথে সেখান থেকে ৭০ হাজার টাকার সুতা ক্রয়, ঘর ৩৫ হাজার ও আন্যান্য খরচ ২০ হাজার টাকাসহ প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ করেন স্বপ্নের তাঁত কারখানাটি চালু করতে। তবে তার মুলধন ছিল মাত্র ১ লাখ টাকা। বাকি টাকা তিনি বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। তিনিসহ আরও দুইজন তাঁত শ্রমিক দিয়ে গত এক মাস ধরে গামছা তৈরি করছেন।

এই উদ্যোক্তা আরও জানান, কারখানায় তৈরি করা গামছাগুলো তিনি স্থানীয় বাজারে পাইকারী হিসেবে এক থান (চার পিস গামছা) ৪২০ থেকে ৪৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। এই মাসে ৭০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকার গামছা বিক্রি করেছেন তিনি। সব খরচ বাদদিয়ে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে তার।

তিনি আরও জানান,বড় ধরনের ব্যাংক ঋণ পেলে কারখানাটি বড় পরিসরে করে আয় বাড়ার পাশাপাশি এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান,মিনি কারখানা হলেও ফুলবাড়ীতে তাঁত শিল্পের মাধ্যমে গামছা তৈরি হচ্ছে এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ওই উদ্যোক্তাকে স্বাগত জানান। পাশাপাশি তিনি জেলা বিসিক শিল্প নগরীর মাধ্যমে প্রনোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন।