১৯৭১ সালের আজ ৭ই ডিসেম্বর পাক হানাদার মুক্ত হয় গোপালগঞ্জ। এই দিনে গোপালগঞ্জ তৎকালিন মহকুমার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামসুল মজিদের সহযোগিতায় ট্রেজারি থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে ঐদিনই তৎকালিন কায়দে আজম মেমোরিয়াল কলেজ (বর্তমান বঙ্গবন্ধু কলেজ) মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। দিবসটি পালন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড যৌথভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ আলোচনা সভার মধ্যে দিয়ে দিবসটি পালন করে।
জানাগেছে, গোপালগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় ২৭ মার্চ থেকেই। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত গোপালগঞ্জ মুক্তি বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে ছিল। মুসলিমলীগ নেতাদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৩০ এপ্রিল শহরে প্রবেশ করে। তারা প্রথমে শহরের ব্যাংক পাড়ায় বঙ্গবন্ধুর বাড়ি বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়) পুড়িয়ে দেয়। এরপর পাকিস্তানি সৈন্যরা ১০/১২টি দলে বিভক্ত হয়ে শহরের হিন্দু অধ্যষিত স্বর্ণপট্রি, সাহাপাড়া, সিকদারপাড়া, চৌরঙ্গী এবং বাজার রোডে লুটপাট করে আগুন দিয়ে প্রায় এক হাজার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে হত্যা আর নারী ধর্ষন শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদাররা উপজেলা পরিষদের মিনি ক্যান্টনমেন্টের মুক্তিকামী সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে হত্যা করে গণ-কবর দেয়।
৬ ডিসেম্বর সূর্য উঠার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে বিভক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করে। চারিদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমন বলয় রচিত ও মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত লগ্নে মিত্রদেশ ভারত প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ায় এখানকার পাক হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে পড়ে।
গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমন করবে এমন সংবাদ পেয়ে পাক সেনারা ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানা উপজেলা পরিষদ (বর্তমানে) সংলগ্ন জয় বাংলা পুকুর পাড়ের মিনি ক্যান্টমেন্ট ছেড়ে পালিযে যায়। মেজর সেলিমের অধীনে পাক হানাদার বাহিনীর একটি দল ঢাকায় যায়। অন্য একটি দল চলে যায় ভাটিয়াপাড়ার ওয়ারলেস্ ক্যাম্পে। ৭ ডিসেম্বর ভোরে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করে মুক্তিযোদ্ধারা, আর সেই সাথে মুক্ত হয় গোপালগঞ্জ শহর ও এর আশপাশ এলাকা।
৭ ডিসেম্বর ভোরে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করে মুক্তিযোদ্ধারা আর সেই সাথে মুক্ত হয় গোপালগঞ্জ শহর ও এর আশপাশের এলাকা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে জনতার বিজয় উল্লাস সেদিন সূর্যদয়ের মত আজ দাড়িয়ে বিস্তৃত করে দিক দিগন্ত।
এ দিবসটি উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও আলোচনাসভার মধ্য দিয়ে গোপালগঞ্জ মুক্তদিবস পালিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড যৌথভাবে এ কর্মসূচী পালন করে।
আজ বুধবার (০৭ ডিসেম্বর) সকালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় জেলা প্রশাসক মো: কাজী মাহবুবুল আলম ও পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা। পরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের হল রুমে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো: কাজী মাহবুবুল আলম।
বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী এমদাদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাভোকেট মুন্সী আতিয়ার রহমান, পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ লুৎফর রহমান বাচ্চু, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মহসীন উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভায় বক্তরা, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর অত্যাচার ও নিয্যাতনের চিত্র তুলে ধরে গোপালগঞ্জ জেলা শহর মুক্ত করার স্মৃতি তুলে ধরেন।